ফ্রিল্যান্সিং নাকি চাকরী? কোনটি কে বেঁছে নিবেন ?

প্রফেশনাল লাইফ শুরু করার পর প্রথম যে চিন্তাটি মাথায় আসে তা হচ্ছে কি করবো ? ফ্রিল্যান্সিং নাকি চাকরী ? আপনি গ্রাফিক ডিজাইনার হোন কিংবা থ্রিডি আর্টিস্টই হোন না কেন সব সময়ই এই ব্যাপারটা নিয়ে দ্বিধা কাজ করে।

ফ্রিল্যান্সিং করবো নাকি জব করবো ? আসলে দুইটারই পক্ষ এবং বিপক্ষ অনেক দিক রয়েছে। সেরা সিদ্ধান্ত নিবেন আপনার জন্য যে দিকগুলো বেশি প্রাধান্য পায় সেটা বিবেচনা করে। আশা করি এই পোস্টের মাধ্যমে সেই সিদ্ধান্ত নিতে আপনার জন্য সহজ হবে।

এখানে চাকরী বলতে বুঝানো হয়েছে যারা এক অফিসে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ফিক্সড স্যালারির জব করে আর ফ্রিল্যান্সার হিসেবে বুঝানো হয়েছে যারা বিভিন্ন অনলাইন মার্কেট প্লেসে কাজ করে এবং বিভিন্ন ক্লায়েন্টের কাজ করে।

কাজের স্বাধীনতা

চাকরীজীবীদের ক্ষেত্রে

বর্তমান আধুনিক কর্মক্ষেত্র গুলোতে যদিও “কাজ ও জীবনের সমন্বয়” করে কাজ করা হয় তবে তারপরেও আমাদের দেশে সব জায়গায় এখনো সেভাবে এই প্রচলন গড়ে উঠেনি।

আমাদের দেশে অনেক কর্মজীবী মানুষই আছেন যারা ৮টা-৫টার বাইরেও প্রচুর সময় অফিসে ব্যয় করে থাকে। এমনকি অফিস টাইমের বাইরেও ইমেইল চেক করা, ফোনে অফিসের বিভিন্ন কাজের রেসপন্স করা সহ অনেক কাজই করতে হয়। তবে এর বাইরে কর্মী বিভিন্ন সরকারি ছুটি, সিক লিভ, বিয়ের ছুটি পাওয়া সহ বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন। এছাড়া বিভিন্ন ভাতা, সুযোগ সুবিধাও পেয়ে থাকেন চাকরীজীবীরা।

ফ্রিল্যান্সিং করার অন্যতম প্রধান সুবিধা হচ্ছে নিজের ইচ্ছা মত সময়ে কাজ করা যায়। ৮-৫ টার অফিসের মত কোন ধরা বাধা নিয়ম নেই। শুধু তাই নয়, অনেকেই আছেন পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পছন্দ করেন। তখন ফ্রিল্যান্সিং হতে পারে আদর্শ কারণ নিজ ঘরে বসেই সকল কাজ এছাড়াও যারা ঘুরাঘুরি পছন্দ করেন তাদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং সোনায় সোহাগা। কারণ সাথে ল্যাপটপ আর ইন্টারনেট নিয়ে যেখানেই যান না কেন সেখানেই কাজ করতে পারেন।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পাশে বসে কাজ করার অভিজ্ঞতা হতে পারে। তবে ফ্রিল্যান্সারদের কাজের বাইরেও কাজ থাকে অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেও খুব বেশি সফল হন না কারণ ফ্রিল্যান্সিং এ ভাল করতে হলে আপনি শুধু ভাল কাজ জানলেই হবে না সাথে সাথে আপনাকে কমিউনিকেশন স্কিলড হতে হবে, বিড করতে হবে, কাজ খুজতে হবে এবং সব শেষে ডেডলাইনের ভিতর একাই পুরো প্রজেক্ট করে জমা দিতে হবে।

পাশা পাশি ক্লায়েন্ট ম্যানেজ করা, নিজের টেকনিক্যাল সমস্যার সমাধান নিজেই করা ইত্যাদি। ফ্রিল্যান্সিং করা অনেকটা ছোট ব্যবসায় পরিচালনা করার মতই। আর আপনি যদি কোর আর্টিস্ট হয়ে থাকেন তাহলে স্টুডিওতে শুধু কাজ করে গেলেই হবে, অন্য যা সব ম্যানেজম্যান্ট করবে। অর্থাৎ নন-আর্টিস্ট অনেক কাজ ফ্রিল্যান্সিং এ করতে হয়।

আপনার যদি নিয়ম কানুন অনুযায়ী কাজ করা এবং প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে কাজ করা ভাল লাগে তাহলে ফুলটাইম স্যালারি চাকরী ভাল হবে। আর যদি আপনার নিজের সময়ে কাজ করতে পছন্দ করেন হোক সেটা দিনে কিংবা রাতে এবং কাজের বাইরেও যদি আপনার অন্য কোথাও সময় দেয়া প্রয়োজন হয় তাহলে ফ্রিল্যান্সিং হতে পারে সেরা পছন্দ।

অফিস পলিটিক্স

অফিস পলিটিকস খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ, যে কারণে কর্মক্ষেত্রে সাধারণ কাজও বেশ জটিলভাবে করতে হয়, আশে পাশের মানুষের অনেক বিষয় ম্যানেজ করে কাজ করতে হয় যা কাজের সময়ের বিশাল একটি পার্ট নিয়ে নেয়। অনেকে এই স্ট্রেস নিতে পারে না এবং অন্য কোথাও চলে যাওয়ার পরিকল্পনায় থাকে সব সময়।

এটা অনেকটা ব্রেক এবং এক্সিলেটর দু পায়ে চেপে গাড়ি চালানোর মতো। একদিকে অফিস পলিটিক্স ব্রেক কষে চলতে হয় আবার অন্যদিকে এক্সিলেটর ব্যবহার করে সামনেও যেতে হয়।

অবশ্যই সব কর্মক্ষেত্র এমন বিসাক্ত নয় তবে বড় কোম্পানীগুলোতে এই ধরণের শক্তি পরীক্ষা দিয়েই টিকে থাকতে হয়।

ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনাকে অফিস পলিটিক্স নিয়ে চিন্তা করার তেমন দরকার নেই। কারণ আপনি কোন নির্দিষ্ট একটি কোম্পানীর আন্ডারে কাজ করছেন না, অনেকগুলো কোম্পানীর বসের সাথে কাজ করছেন এমনকি আপনার যদি নিয়মিত ক্লায়েন্টস থাকে তাও আপনি অফিস পলিটিক্স থেকে দূরে আছেন।

আপনি যেহেতু রিমোটলি কাজ করছেন, অ্যাসাইনম্যান্ট শেষ করে ইনভয়েস সেন্ড করে দিচ্ছেন সেহেতু পলিটিক্সের কোন সুযোগই নেই। আর যদি পলিটিক্সের স্বীকার হয়েই যান তাহলে সেই ক্লায়েন্টকে বাদ দিয়ে নতুন ক্লায়েন্ট অনায়াসেই পেয়ে যাবেন। তবে পুরোপুরি পলিটিক্স বাদ দিতে পারবেন না হয়ত, কারণ অনেক সময় ক্লায়েন্ট একই কাজে বার বার কারেকশন দেয় যা অনেকটাই ফ্রিতেই করতে হয়।

যদি আপনি মানুষকে বুঝতে পারেন, তাদের ইমোশনকে ধরতে পারেন, কমপ্লেক্স পরিবেশে কাজে অভ্যস্থ থাকেন এবং অন্যদের সাথে প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে যেতে পারেন তাহলে অফিস পলিটিক্স করেও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারেন। আর যদি এত কিছু হ্যান্ডেল করতে না চান তাহলে ফ্রিল্যান্সিংই হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ।

সুযোগ-সুবিধা

ফিক্সড স্যালারির চাকরীজীবীদের এটাই হলো সবচেয়ে বড় সুবিধা এবং পার্থক্য। কারণ চাকরীজীবীরা অনেক ধরণের ভাতা পেয়ে থাকে যেমন, ঈদ বোনাস, যাতায়াত সুবিধা, স্যালারি লোন, নববর্ষ ভাতা, মাতৃকালীন ছুটি এবং চাকরীজীবন শেষে অবসর প্রাপ্ত ভাতা সহ অনেক কিছু।

এটা শুধু আপনারই সুবিধা নয় সাথে সাথে আপনার পরিবারকেও নিরাপদ করে তুলে। এছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানীভেদে আলাদা সুবিধা দেয় যেমন, ফ্রি জিম মেম্বারশীপ, কোম্পানী ক্যাফেটেরিয়া এবং বিভিন্ন প্রডাক্টে ছাড়! কোম্পানী অনেক সময় ট্রেইনিং এর ব্যবস্থাও করে থাকে ফলে নিজের স্কিল উন্নয়ন অনেক কোম্পানী নিজ খরচেই করে দেয়।

ফ্রিল্যান্সার হিসেবে সব কিছু আপনাকেই করতে হবে। যাবতীয় খরচ এবং অবসরের পর কিভাবে জীবনযাপন করবেন সেটার দায়িত্বও আপনার এমনকি কোন ট্রেইনিং করা লাগলে সেটাও নিজ দায়িত্বেই করতে হবে। তবে অনেক সময় ক্লায়েন্ট খুশী হয়ে বোনাস দেয়, অনলাইন টিউটোরিয়াল কোর্স কিনে দেয় ইত্যাদি।

এখানে পরিস্কারভাবেই বলে দেয়া যায় কে বিজয়ী। তবে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি যদি এই বিষয়গুলো মাথায় নিয়েও পরিকল্পিতভাবে কাজ করা যায় তাহলে অনেকটাই ওভারকাম করা সম্ভব।

2 thoughts on “ফ্রিল্যান্সিং নাকি চাকরী? কোনটি কে বেঁছে নিবেন ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *